১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যতবার ভোট হয়েছে (১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালের নির্বাচন বাদে), প্রতিবারই ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। মানুষে মানুষে সমান অধিকার, মানুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে, মানুষের ভোটের অধিকার প্রয়োজন।
ইসলাম ধর্মের অন্যতম আদর্শ হল গণতন্ত্র। মহানবী (সঃ) মৃত্যুর পূর্বে কোন রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়োগ করে যান নাই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সাহাবীদের মতামতের ভিত্তিতে হযরত আবুবকর(রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হন। এরপর হযরত ওমর(রাঃ), হযরত ওসমান(রাঃ), হযরত আলী(রাঃ) গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সাহাবিদের মতামতের ভিত্তিতে খলিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন। এটাই ইসলামের বিধান। এবং ইসলামের বিধান গণতন্ত্র অনুসরন করা আমাদের ইমানী দায়িত্ব। গনতন্ত্র বাদ দিয়ে পরিবারতন্ত্র / রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা একটা অনৈসলামিক কাজ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নাই। বড় দলগুলোর নেতা নির্বাচিত হয় পরিবারতান্ত্রিক /রাজতান্ত্রিক পন্থায়। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনে কোন গোপন ভোট বা মতামত দেয়ার ব্যাবস্থা নাই। তাই আমাদের দলে প্রতি দুই বছর পর পর গোপন ভোট/মতামতের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচনের ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ একজন ভোটার তার পছন্দমত প্রার্থী / ব্যাক্তিকে (কেউ প্রার্থীতা উপস্থাপন করলে তাকে/ বা রাজার সামনে প্রার্থীতা উপাস্থাপনে কেউ ভয় পেলে সেরকম প্রার্থীকেও) ভোট দিতে পারবে। অর্থাৎ প্রতিজন ভোটারই একেকজন প্রার্থী হিসাবে গন্য হবে।
গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে আমাদের দাবী——–_————- ১. প্রেসিডেন্ট, সংসদ, এবং বিচার বিভাগের মধ্যে Checks and Balances পদ্ধতি সমুন্নত রাখতে হবে। ২. প্রেসিডেন্ট / ভাইসপ্রেসিডেন্ট / জেলাপরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের ও কলেজ মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের গোপন ভোটে। প্রতিটা জেলার প্রতিনিধি, প্রতিটা ধর্ম বর্ন জাতী র প্রতিনিধি সমন্বয়ে ১০০ সদস্যের সিনেট কমিটির সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডন্ট। বিচারপতি, নির্বাচন কমিশন, দুদক, বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি, RAB নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকবে প্রেসিডেন্ট এর হাতে।
স্বচ্ছতা একটি সুস্থ গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ। এটি নিশ্চিত করে যে সরকারী কার্যক্রমে কোনো ধরণের অপব্যবহার, দুর্নীতি বা স্বেচ্ছাচারিতা নেই। রাজনৈতিক স্বচ্ছতার অভাব দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা নষ্ট করতে পারে, এবং জনগণের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করে। আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটছে, রাজনৈতিক স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক স্বচ্ছতার অভাব সরকারী নীতির কার্যকারিতা ও জনগণের সেবা প্রদান ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। দুর্নীতির কারণে সরকারি প্রকল্পগুলির প্রকৃত সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছায় না, যা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করে। এজন্য, একটি কার্যকর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে যা সরকারের সকল কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে এবং জনগণের সঙ্গে খোলামেলা যোগাযোগ স্থাপন করবে।
স্বচ্ছতার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও সরকারি কার্যক্রম জনস্বার্থে এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে জনগণ সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং কোনো প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে। এছাড়াও, স্বচ্ছতা প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরো দক্ষ এবং প্রভাবশালী করে তোলে, যা দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় উন্নয়নে সাহায্য করবে।
রাজনৈতিক স্বচ্ছতার জন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলি তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে। এটি কেবল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে নয়, বরং দলের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ও সদস্যদের আচরণ সম্পর্কেও প্রযোজ্য।
তবে, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষারও প্রয়োজন। জনগণকে তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন যাতে তারা সরকারের কার্যক্রম মনিটর করতে পারে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজনৈতিক স্বচ্ছতার পথ উন্মোচন করতে এবং একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা একটি স্বচ্ছ, ন্যায়সঙ্গত এবং সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে সক্ষম হবো, যেখানে সকলের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে।