বাংলাদেশ ও তেত্রিশ বছরের কাল অধ্যায় (১৯৯১- থেকে- ২০২৪)।

বাংলাদেশ ও তেত্রিশ বছরের কাল অধ্যায় (১৯৯১- থেকে- ২০২৪)।

ছাত্র জনতার গন আন্দোলনে ১৯৯০ তৎকালীন প্রেসিডন্ট জনাব হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।…….. … ………………. .. এরপর অন্তর্বর্তী কালীন কেয়ার টেকার সরকার বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ এর নেতৃত্বে সংসদ নির্বাচন হয়। ………. ………………………….. এ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। নিয়মানুযায়ী ১৯৯১ সালের—— তারিখে সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন বিজয়ী দলের নেতা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করে। এবং প্রেসিডন্ট হিসেবে বিচারপতি জনাব শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ বহাল থাকেন। নিয়মঅনুযায়ী প্রেসিডেন্ট এর পাচ বছর মেয়াদ শেষ হলে, প্রেসিডন্ট নির্বাচন হলে, পরবর্তী প্রেসিডন্ট এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে প্রেসিডন্ট শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ এর অবসরে যাওয়ার কথা।

কিন্তু বাস্তবে তা ঘটে নাই। আপামর শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী অল্পশিক্ষিত বার কোটি মানুষের সামনে একটা সাংবিধানিক ক্যু সংগঠিত হয়ে গেল। দেশের আপামর জনসাধারণ তাদের ভোট দেয়ার অধিকার, ইচ্ছা অনিচ্ছা ভাল লাগা মন্দ লাগা আবেগ অনুভূতি প্রকাশের স্বাধীনতা অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ভোট দেয়ার অধিকার হারাল। আগে ( প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোঃ এরশাদ, ও প্রেসিডন্ট জিয়াউর রহমানের সময়) জনগন ভোট দিয়ে প্রেসিডন্ট নির্বাচন করত;৷ ১৯৯১ সালের পর তাদের আর ভোট দিয়ে প্রেসিডন্ট নির্বাচনের অধিকার থাকল না।৷ ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ ৷৷৷৷৷৷৷৷ আগে জনগন সরাসরি ভোট দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করত; উপজেলা সিস্টেম বাতিল হওয়ার পর, জনগন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে সরাসরি ভোট দেয়ার অধিকার হারাল। যখন গ্রামের বাড়ি গেলাম, তখন বুঝতে পারলাম গ্রামের শিক্ষিত,অল্পশিক্ষিত জনগন বুঝতেই ই পারে নাই, যে তারা আর প্রেসিডন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে যেতে পারবে না। পান জর্দা চিবোতে চিবোতে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার কি আনন্দ ; তা আজ বিলুপ্ত হল।

জনগনের যে অধিকারগুলো লোপ পেল তা হল——-++++–১. প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার। ২. উপজেলা নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার। ৩. উপজেলে কোর্ট/আদালতে বিচার চাওয়ার অধিকার। ৪. বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট এ বিচার চাওয়ার অধিকার। ৫. জরুরী পুলিশ সেবা পাওয়ার অধিকার। গ্রাম ওয়ার্ড পর্যায়ে যে ভিলেজ ডিফেন্স পার্টি গুলো ছিল, তা বিলোপ করা হয়। গ্রাম পর্যায়ে জরুরী শৃঙ্খলা জনিত বিষয়গুলোতে এরাই প্রথম হাজির হত।

জনগনকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে, উন্নত বিশ্বে অনবরত চেস্টা প্রচারনা দেখেছি। কামালা হারিস / ডোনাল্ড ট্রাম্পের তেমন কোন পোস্টার লিফলেট দেখা যায় না। কিন্তু সরকার তার নাগরিকদের ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য প্রায় প্রতিদিনই লিফলেট পোস্টার বাসা বাড়ি মার্কেট অফিসে স্কুল কলেজে রেখে দিচ্ছে। বাসা বাড়ির দরজার সামনে মেইল বক্সে রেখে যাচ্ছে। কোনটায় লেখা থাকছে আর্লি ভোটিং সিস্টেম, কোনটায় মেইলে ভোট সিস্টেম, কোনটায় ——————–+—————+ বারমাসই এ প্রচারনা চলছে।৷ ৷ বার্ধক্য /ডিসএবিলিটি কারনে যারা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে না, তাদের জন্য মেইল ভোটিং এর ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। যারা জরুরী কারনে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে না, তাদের জন্য রয়েছে আর্লি ভোটিং এর ব্যাবস্থা।

আমেরিকায় তিনশত বছরের পুরনো গণতান্ত্রিক চর্চা, জনগনের প্রত্যাহিক জীবন অভ্যাস কার্যক্রমে মিশে গেছে; কিন্তু তবুও তারা জনগনকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে, প্রচার প্রচারনার কমতি রাখছে না। কিন্তু বাংলাদেশে ভোটের অধিকার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলার প্রচেষ্টা কখনই তেমন একটা দেখা যায় নাই। তাই মানুষ বুঝতেই পারে নাই যে, কয়েকজন সংসদ সদস্য মিলে সংসদে জনগনের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য বিল পাশ করছে। বা জনগনের ভোটের অধিকার কয়েকজন সংসদ সদস্যের ভোটে বিলুপ্ত করা যায় না।

জনগনের এই ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার বিরুদ্ধে তৎকালীন আওয়ামীলীগ / জাতীয়পার্টি তেমন কোন প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে নাই। আওয়ামীলীগ, জাতীয়পার্টির সংসদীয় আসন ছিল খুবই কম। তাছাড়া আওয়ামীলীগ ১৯৭২ সালে একই ধরনের ( জনগনের ভোটের অধিকার বিলুপ্ত করার) সংবিধান প্রনয়ন করেছিল। ও প্রবল গনঅসন্তোষের মূখে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জনাব শেখ মুজিবর রহমান সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন। এরপর আর সামরিক শাসক প্রেসিডন্ট জিয়াউর রহমান ও প্রেসিডন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ এরকম একনায়কতান্ত্রীক শাসন ব্যাবস্থা চালু করতে আগ্রহী হয়ে উঠে নাই। ৷৷৷ ৷৷৷ ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ আর জাতীয়পার্টির নেতা কর্মীরা ছিল জেলে; তারাও তেমন কোন শক্ত প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারে নাই।

স্পষ্টতই এটা ছিল হুসেইন মোঃ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আন্দোলনকারী তিনদলীয় জোটের চুক্তির বরখেলাপ। অর্থাৎ প্রেসিডন্ট এরশাদ এর পতনের জন্য কোন একক দল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে নাই। এরজন্য প্রয়োজন হয়েছিল বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জামায়াতে ইসলামী, বামপন্থী, ও ইসলামী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।৷৷৷৷ ৷৷৷৷৷৷৷ ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ ৷ তিনদলীয় জোট ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যে চুক্তি করেছিল, তার ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷

৪. ক.. ধারা হল-_—__——————————————–জনগনের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতির ভিত্তিতে দেশে সাংবিধানিক শাসনের ধারা নিরঙ্কুশ ও অব্যাহত রাখা হবে এবং অসাংবিধানিক যে কোন পন্থায় ক্ষমতা দখলের প্রতিরোধ করা হবে। নির্বাচন ব্যতীত অসাংবিধানিক বা সংবিধান বহির্ভূত কোন পন্থায়, কোন অজুহাতে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে না।

খ. জনগনের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষ এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা হবে।

গ. মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী সকল আইন বাতিল করা হবে।

কিন্তু বাস্তবে যা হল, তা হল_-_———————————সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি

জনগনের মৌলিক অধিকার, ভোট দেয়ার অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য, গনভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ব্যাবস্থা, ও গনভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন ব্যাবস্থা বাতিল করা হল।

বিচারবিভাগের স্বাধীনতার কোন উদ্যোগ ই নেয়া হল না; উল্টা, – বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরনের জন্য ঘুষ স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ শুরু হল। জাল সনদ জমা নিয়ে বিচারপতি নিয়োগের মাধ্যমে, স্বজনপ্রীতির চুড়ান্ত নির্লজ্জতা দেখা গেল। ( বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফায়েজি)।

রাস্ট্রের সর্বোচ্চ পদাধিকারী রাস্ট্রপতির গনভোটে নির্বাচিত হওয়ার বিধান, সংসদ সদস্যদের ভোটে বিলোপ করা কোনক্রমেই আইনসংগত নয়।

জনগনের ভোটে

এখন জনগন ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচন করবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন বিজয়ী দলের নেতা। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে আর জনগনের সরাসরি ভোট দেয়ার অধিকার থাকল না।

প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, প্রেসিডেন্ট মোঃ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদকে পদত্যাগের জন্য অনবরত চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। প্রেসিডন্ট মোঃ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করবেন, তার কোন স্বিদ্ধান্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। এ পরিস্থিতিতে সংসদ সদস্যদের ভোটে জনাব আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে প্রেসিডন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। প্রেসিডেন্ট মোঃ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ প্রেসিডন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাসের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ৷ ৷৷ ৷৷ ও প্রেসিডন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাস তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ সংবিধান অনুযায়ী গনভোটেই প্রেসিডন্ট নির্বাচিত হওয়ার কথা ছিল। গনভোটের নিয়ম পরিবর্তন করতে চাইলে, তা গনভোটে জনগনের মতামত নিয়ে করা দরকার ছিল। কিন্তু এখানে তা করা হয় নাই। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা একটা নজীর বিহীন ঘটনা। এরপর শুরু হল ক্রমান্বয়ে একনায়কতান্ত্রীক পথে যাত্রা। এবং এ যাত্রা ২০২৪ সাল পর্যন্ত তেত্রিশ বছর ধরে চলছিল। লুটপাট ঘুষ দুর্নীতি খুন গুম এবং ব্যপক হারে বিদেশে টাকা পাচার এ সময়েই ঘটেছিল।

সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ সংযুক্তি, ——-+—————————- শাসন ব্যাবস্থা নিরঙ্কুশ একনায়কতান্ত্রীক করার জন্য ——সালে সংবিধানে যুক্ত করা হয় ৭০ অনুচ্ছেদ। এ অণুচ্ছেদ যুক্ত হওয়ার পর সংসদ সদস্যদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, বাকস্বাধীনতা, ইচ্ছার স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়। সংসদ সদস্যগন প্রধানমন্ত্রীর( সংসদ নেতা/নেতৃর) ইচ্ছার বিরুদ্ধে সংসদে কোন বিলে ভোট দিতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর ভুল স্বিদ্ধান্তেও তারা ভোট দিতে বাধ্য। পূর্বের দিনগুলোতে স্বচ্ছল প্রভাবশালী নেতৃত্ব আকাঙ্ক্ষী লোকজন নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য বিভিন্ন খেলাধুলা ( হাডুডু, ফুটবল, নৌকাবাইচ, ঘুড়ি উড়ানো, ঘোড়ার দৌড়) আয়োজন করত। সেই দিনগুলোতে স্থানীয় জনপ্রিয় লোকদেরকেই পার্টি থেকে নির্বাচনের জন্য নমিনেশন দেয়া হত। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর থেকে এই প্রথা আস্তে আস্তে বিলীন হওয়া শুরু করে। কেন্দ্রীয় নেতৃ টাকার বিনিময়ে নমিনেশন বিক্রির প্রথা চালু হওয়া শুরু হয়। নমিনেশন প্রার্থীরা টাকার বিনিময়ে নমিনেশন কেনার জন্য বিবেক বিবেচনা বিসর্জন দিয়ে বিভিন্ন অবৈধ পথে টাকা উপার্জনের চেস্টা করতে থাকে। তারা অবৈধ পথে চাকরী পাওয়া, চাকরীর বদলীর দালালী। কোর্ট কাছারিতে জামিন খালাশের দালালি । এলজিইডি, সড়ক বিভাগ সহ বিভিন্ন দপ্তরের কাজ পাইয়ে দেয়ার দালালি, এমনকি সরকারী এতিম খানার এতিমদের খাবার সরবরাহের কাজ পাইয়ে দেয়ার দালালি, থানা পুলিশ, পাসপোর্ট করিয়ে দেয়ার দালালি ইত্যাদি বিভিন্ন দালালি মাধ্যমে টাকা উপার্জন করে কেন্দ্রীয় নেতা ম্যানেজ করার প্রক্রিয়া শুরু করে ।

১৯৯৫ সালের নির্বাচন-

১৯৯৬ সালের নির্বাচন–

২০০১ সালের নির্বাচন—— এটিই ছিল বাংলাদেশের একমাত্র নির্চবাচন, যে নির্বাচন নিরপেক্ষ করার জন্য কোন আন্দোলন করতে হয় নাই।

২০০৬/৮ সালের নির্বাচন—

২০১২

২০১৭

২০২৩

২০২৪- গণআন্দোলন

Scroll to Top